ছাঁচে বানানো ছানার সন্দেশ
কলকাতা শহরে অতিথি সৎকারের জন্য গলির মোড়ে মোড়ে রয়েছে মিষ্টির দোকান। তবু ছোটবেলায় দেখেছি দিদিমা পালা পার্বণ ছাড়াও বাড়িতে নারকেলের সন্দেশ, ছানার সন্দেশ, পান্তুয়া, জিভেগজা, ঝাঁঝরি নিমকি এসব বানাতো। এই ঝাঁঝরি নিমকিকে অবশ্য আমরা বলতাম নর্দমা নিমকি।
দিম্মাকে সাহায্য করার জন্য মা, মাসি, মাইমাদের সাথে আমরা কুঁচোরাও পূর্ণ উদ্যমে লেগে পড়তাম। একটা টিনের গাছ মার্কা ডালডার কৌটো ছিল। তার ভিতর থেকে বেরহোতো কাঠের আর পাথরের সন্দেশের ছাঁচ।
বেশ মনে আছে, ন’মাইমার বিয়ের পর আমরা সবাই মিলে পান্তুয়া বানাতে বসেছি। দিম্মা শিখিয়েছে কিভাবে হাতের চাপে গোল পান্তুয়া বানাতে হয়। বেশ জোরে চাপ দিয়ে না পাকালে ভাজার পরে রসে ফেললেই ভেঙে যায়।
গুরুমার নির্দেশ মতো আমরা সবাই নিজেদের দক্ষতা দেখাতে ব্যস্ত। নতুন বউয়ের তখনও শিক্ষা শুরুই হয়নি তবুও সে পরম উৎসাহে নরম হাতের আলতো চাপে গোল্লা বানাচ্ছে আর সেই গোল্লা রসে পড়া মাত্র ভেঙে যাচ্ছে। আর সেই ভাঙা পান্তুয়ার দোষ পড়ছে গুরুকূলের সর্ব কনিষ্ঠা সদস্যার উপর, অর্থাৎ আমি। শেষে আর থাকতে না পেরে বললুম, “হাঁড়ি আলাদা করে দাও”। না না সেই আলাদা হওয়ার কথা বলিনি। মানে আমি আমার বানানো পান্তুয়া আলাদা হাঁড়ির রসে ফেলবো। ব্যাস, বোঝা গেল কার বানানো পান্তুয়া ভাঙছিলো।
যে খানে থাকি সে জায়গায় টাটকা ছানার মিস্টি পাওয়া যায়না , তাই এবার কলকাতায় এসে তিনটে সন্দেশের ছাঁচ কিনেছি l
আজ অনেক দিন পরে আবার ছাঁচে ফেলে সন্দেশ বানাতে গিয়ে দিম্মার কথা মনে পড়ছিলো। আজ দিম্মা বেঁচে থাকলে বলতাম, সেই যে তুমি শিখিয়েছিলে দেখোতো, আমি কেমন শিখেছি। বেশ বুঝতে পারছি দিম্মা দেখে ও চেখে কত খুশি হতো।