ছুটির দইয়ের মালপোয়া ও গ্রীক লুকোমাদাসের গপ্পো
দোতলার টানাবারান্দা হইতে মুখ বাড়াইয়া হেমলতা স্বামীকে ডাকিলো – শুনছেন , আজ একটু দম্বল আনতে হবে , ময়দাও বাড়ন্ত | ” নিচের উঠানে দাঁড়াইয়া দীপেন্দ্রনাথ কাকাবাবুর সহিত কথা কইতেছিলেন | আপিস ঘর হইতে কাকাবাবু রসিকতা করিয়া বলিলেন – ” নীচে বসে লিখতে লিখতে রোজ শুনি, চাই ঘি, চাই সুজি, চিড়ে ময়দা, মিষ্টি তৈরি হবে; যত চাচ্ছ তত পাচ্ছ, মজা খুব , দিপু ত কখনো না বলবে না, যত চাইবে ততই দেবে, তার মত কর্তা আর তোমার মত গিন্নী হলে হয়েছে আর কি, দু’দিনেই ফতুর | ”
কাঠের জ্বালের আগুনটা উস্কিয়ে দিতে দিতে কাকিমা উত্তর করিলেন – ” দীপু , বোঝে তার সঙ্গে কাজ করে সুখ , তোমার এদিকে নজর দেওয়া কেন ? ”
হেমলতা দেখিতে পাইল উনানের গনগনে আঁচে কাকিমার ফর্সা মুখখানি রাঙা হইয়া উঠিয়াছে | বড় মায়া হয় তার , সম্পর্কে কাকিমা হইলেও তাহাদের বয়েসের ব্যবধান একবৎসর মাত্র | সারা সংসারের দায়িত্ব , আশ্রমিকদের রান্না তদোপরি কাকাবাবুর নিত্যনৈমিত্তিক ফরমায়েশ , আজ চিঁড়ের পুলি তো কাল মানকচুর জিলেপি .. | পাকশালা তো নয় , যেন আস্ত একখানা গবেষণাগার | রোজই রান্না নিয়ে নিত্য নতুন গবেষণা চলিতেছে | হাতে হাতে যথাসাধ্য সাহায্য করে হেম |
তবে একথা বলাই বাহুল্য যে কাকিমার হাতের চিড়ের পুলি, দইয়ের মালপোয়া , পাকা আমের মিঠাই যিনি একবার খাইয়াছেন, তাহার স্বাদ তিনি কখনো ভুলিতে পারেন নাই। এবাড়িতে পাকশালাটি বেশ দূরে বলিয়া কাজের সুবিধার্থে বারান্দার এক কোনে এই অস্থায়ী উনানের বন্দোবস্ত হইয়াছে | কখনো সখনো কাকিমা নতুন কিছু রান্না করিলে কাকাবাবু বেতের মোড়া খানি লইয়া পাশে বসিয়া তদারক করেন | সে সময় হেমলতা কিঞ্চিৎ আড়ালেই থাকে |
আজ সকালের রান্নাবান্নার পর্ব সমাধা হইলে বানানো হবে দইয়ের মালপোয়া | মৃণালিনীর হাতের দইয়ের মালপো খাইয়া নাটোরাধিপতি মহারাজ জগদিন্দ্রনাথ ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছিলেন । দই দিয়ে মাখা ময়দার মিশ্রণ ছুটির হাতের গুণে ডুবো তেলে পড়িয়া টুপটুপে হইয়া ফুলিয়া উঠিত , তাহারপর সেই জালিদার তুলতুলে মালপোয়া ডুবদিত ঈষদোষ্ণ রসে …. আহা যেন অমৃত |
ছুটি জানতেন কিনা জানিনা তবে প্রায় একই উপকরণ দিয়ে সুদূর গ্রীসদেশে অনেকটা একই রকম পদ্ধতিতে বানানো হয় একটা মিষ্টি , যার নাম লুকোমাদাস | পুরানো প্রথা অনুযায়ী লুকোমাদাসের ব্যাটারে ইস্ট দিয়ে সন্ধান প্রক্রিয়া ঘটানো হতো , তবে বর্তমানে অনেকে ইস্টের পরিবর্তে ময়ান দেওয়া ময়দা আর দইয়ের সঙ্গে বেকিং পাউডার মিশিয়ে তৈরী করেন মুচমুচে জালিদার লুকোমাদাস | তারপর তাকে সামান্য লেবুর রস মেশানো চিনির রসে মাখিয়ে আইসিং সুগার অথবা পেস্তা কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয় | এক্ষেত্রে ব্যাটারের ঘনত্ব দইয়ের মালপোয়ার ব্যাটারের থেকে বেশী ঘন হয় , অনেকটা তালের বড়া বা রস বড়ার মতো |
মজার ব্যাপার হলো , এই একই উপকরণ ভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে তৈরী হয়ে যায় বাঙালির অতি পরিচিত একটি মিষ্টি – বালুশাহী | সেক্ষেত্রে অবশ্য ময়দাটা আরেকটু বেশি দিতে হবে | ময়দায় ঘিয়ের ময়ান দিয়ে দই দিয়ে লুচির ময়দা মাখার মতো করে মাখলেই তার থেকে তৈরী হবে বালুশাহী |
লকডাউনের বাজারে দই তো ঘরেই পাতা যায় আর ঘি ময়দা চিনি এখনো দুষ্প্রাপ্য হয়নি , তাই সহজেই বানানো যাবে এই তিনটে মিষ্টি | রয়ে বসে খান , আজ লুকোমাদাস রইলো আর দইয়ের মালপোয়ার ভিডিও , পরের দিন বালুশাহী হবেখন |
লেখা ও ছবি – নিজস্ব