ছ্যাঁচড়া
অনেক সময় কোনো গোটা সব্জির ছোট টুকরো বেঁচে যায়, যেটা দিয়ে একবেলার জন্য একটা সম্পূর্ণ পদ তৈরি করা যায়না; এইরকম অবহেলায় পড়ে থাকা সংসারের ছোটো ছোট দুঃখ হাসি-কান্নার মতো টুকরো-টাকরা শাক-সব্জি আর মাছের মাথা দিয়ে তৈরী একটা লোভনীয় পদ হলো ‘ছ্যাঁচড়া’, যে রান্নাটা কয়েকবছর আগে পর্যন্ত যেকোনো পালা-পার্বণের দিনে সকালের মেনুতে স্থান পেতো। কলাপাতায় ধোঁয়াওঠা গরম ভাতের পাশে ‘ছ্যাঁচড়া‘ স্বমহিমায় বিরাজ করতো।
যে সময়ের গল্প করছি সেই সময় অনুষ্ঠান-বাড়িতে বাড়ির লোকেরাই কোমরে গামছা বেঁধে এলুমিনিয়ামের হাতা বালতি হাতে খাবার পরিবেশন করতো ….
যাক সে সব কথা, নামে ‘ছ্যাচড়া‘ হলেও ওনার মধ্যে ছ্যাঁচড়ামির কোনো লক্ষণই নেই, বরং পুষ্টিগুনের বিচারে বেশ একটা কৌলিন্য লক্ষ্য করা যায় ; তবে আজকের বাঙালি পিজা, পাস্তা, রোল চাউমিন এর রেষারেষির ধাক্কায় এই সব লুপ্তপ্রায় রান্না কে ভুলতে বসেছে। এই লেখাটা সেই সব রান্নাকে মনে করিয়ে দেবার একটা ছোট্ট প্রয়াস বলে মনে করতে পারেন :)।
চলুন তবে, কোমর বেঁধে লেগে যাই কাজে।
প্রথমে কাঁচা বাজারের ফর্দ :
〰 〰 〰 〰 〰 〰 〰 〰
✔পুঁইশাক,
✔আলু/রাঙালু (আমি রাঙালু দিয়েছি)
✔কাঁচা-কুমড়ো
✔মাছের মাথা (সাইজ অনুযায়ী ২ বা ৪ টুকরো করা) ও মাছের তেল
✔পেঁয়াজ কুচি
✔পাচফোড়ণ
✔শুকনো-লঙ্কা
✔কাঁচা-লংকা
✔হলুদ
✔নুন
✔আখের গুড় আর
✔বেশ খানিকটা সর্ষের তেল
রোগা হওয়ার দোহাই দিয়ে তেল ঢালতে কার্পণ্য করলে এই রান্নার স্বাদে ঘাটতি থেকে যেতে পারে।
সম্পর্ক মধুর করতেই হোক বা রান্না সুস্বাদু করতে “স্নেহ” পদার্থ অপরিহার্য।
পদ্ধতি :
〰〰〰
✔প্রথমে মাছের মাথার টুকরো গুলো মচমচে করে ভেজে তুলে রাখুন সঙ্গে মাছের তেলও।
✔এবার ওই তেলে শুকনো-লঙ্কা আর পাচফোড়ণ দিন।
✔ফোরণের গন্ধ বেরহলে ওতে ছোট-ছোট ডুমো করে কাটা সব্জি, কুচোনো শাক, সামান্য গুড় (চিনির বদলে) আর পরিমান মতো নুন দিয়ে অল্প নেড়ে-চেড়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন বেশকিছুন।
✔আনাজ আর মশলা-পাতি স্বাদ-গন্ধের মেলবন্ধনের পর ওতে ভেজে রাখা মাছের মাথার টুকরো গুলো দিয়ে সামান্য হলুদ গুঁড়ো আর বেশ কয়েকটা কাঁচা-লংকা চেরা দিয়ে একটু খুন্তি চালিয়ে দিন এবং ঢাকা দিয়ে রাখুন যতক্ষননা সমস্ত সব্জি তেল মশলাতে মজে গিয়ে প্রায় অর্ধেক না হয়ে যায়।
✔ও হ্যাঁ দুটো উপাদান লিখতে ভুলে গেছি; ও দুটো মেশাতে ভুলবেন না যেন; একটা হলো ‘ধৈর্য ‘ আর অন্যটা ‘ভালোবাসা’।
