গোবিন্দ-ভোগ চাল আর মাছের মাথা দিয়ে মুড়ি-ঘন্ট
পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক না কেন ‘মাছ-মিষ্টি & more’ জোগাড় করতে গিয়ে প্রত্যেক ‘বাঙালি’ একেকজন কলম্বাস হয় ওঠে। কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ির সবথেকে কাছের মাছের বাজার আর মিষ্টির দোকানের হালহদিশ চলে আসে তার নখদর্পনে।
পৃথিবীর কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়া ‘মাছে ভাতে বাঙালি’রা এভাবেই অক্ষুন্ন রেখেচলেছে তাদের নিজস্ব বাঙালীয়ানাকে।
বাঙালির এই মাছ-প্রীতি প্রতিবিম্বিত হয় তার প্রাদেশিক সাহিত্যের মধ্যেও, ঠিক সেই কারণেই বাংলা সাহিত্যের আনাচে-কানাচেও প্রচুর মাছ কিলবিল করতে দেখা যায়। কোনো অলস-দুপুরে বা নিদ্রাহীন রাত্রে ছিপ ফেলে বসে থাকলে, বঁড়শিতে গেঁথে যায় সুস্বাদু ও রসালো কিছু মাছের গল্প। এই যেমন ধরুন –
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, পত্নীর মান ভাঙাতে একটা মজার কৌশল প্রয়োগ করতেন। ভগবতী দেবী রাগ করে দরজা বন্ধ করলে, তিনি বেশ ভারী ওজনের একটি রুই-কাতলাজাতীয় মাছ কিনে উঠানে সশব্দে ফেলে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে উঁচু গলায় বলতেন, ‘‘খবরদার, আমার মাছ কেউ যেন না ছোঁয়।’’ এখানে উদ্দিষ্ট ‘কেউ’ আর অন্য কেউ নন, ভগবতী দেবীই। এতে ম্যাজিকের মতো কাজ হতো। ভগবতী দেবী রাগ ভুলে তক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে বঁটি নিয়ে মাছ কুটতে বসে যেতেন।
শরৎচন্দ্রের ‘মেজদিদি’তে আমরা দেখতে পাই একান্নবর্তী পরিবারের মেজোবৌ হেমাঙ্গিনী যেই তার বড় জা’র সৎভাই কেষ্টকে আস্ত একটা রুই মাছের মুড়ো খেতে দিলেন, অমনি শুরু হয়ে গেল আশান্তি। কারণ তখনকার দিনে কোনো পরিবারে, মাছের মাথা তারই পাতে পড়তো, যে কিনা ওই পরিবারের সব চাইতে আদর আর ভালোবাসার পাত্র, তাই বাপ-মা মরা ছেলেটার ভাগ্যে এত সুখ সইলো না।
এও দেখা যায় যে একান্নবর্তী পরিবারের স্নেহপরবশ মা-জ্যেঠিমারা তাদের আদরের ছেলের পাতে মাছের মাথা, দই এর মাথা, ঘন দুধের পায়েস প্রভৃতি তুলে দিলেও, সদ্য-বিবাহিত তরুনটি খেতে না পারার অজুহাতে বা পেট ভরে যাওয়ার অছিলায় আর নবপরিণীতা বালিকা-বধূটির জন্য তা রেখে যেত। তখনকার দিনে সোচ্চার প্রেম-নিবেদনের আদিখ্যেতা বড়ো একটা ছিল না, তার পরিবর্তে এরকম মিষ্টি প্রেম সত্যি মন ছুঁয়েযায়।
আজকালকার ছেলেমেয়েরা লাল গোলাপের বদলে মাছের মুড়ো দিয়ে প্রেম-নিবেদনের এই মিষ্টি রোমান্টিকতার স্বাদ আর পেলো কই ?
যাক সে সব কথা, এতক্ষন ধরে মাছের মাথা নিয়ে আপনার মাথা খাচ্ছি দেখে, নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে আজ ওকে দিয়েই কিছু একটা বানাবো , আজ বানাবো মুড়ি-ঘন্ট।
ঘটি-বাড়ির মেয়ে হিসেবে যে রান্নাটাকে ছোটবেলা থেকে ‘মুড়ির ঘন্ট’ বলে দেখে ও চেখে এসেছি, তা চাল নয় ভাজা মুগ ডাল আর মাছের মাথা সহযোগে তৈরী এক উপাদেয় পদ, যাতে খুব ছোট ছোট ফুলকপি ভাজা, কড়াইশুঁটি আর কিশমিশ ও দেয়া হয় এবং যা প্রথম পাতে সুক্তোর পরে পরিবেশন করা হয়।
তবে আজ বানাচ্ছি গোবিন্দ-ভোগ চাল আর মাছের মাথা দিয়ে মুড়ি-ঘন্ট।
মুড়ি -ঘন্ট
( Gobindo Bhog Chaal diye Murir Ghonto )
উপকরণ –
〰〰〰〰
রুই বা কাতলা মাছের মাথা – ১টি
গোবিন্দভোগ চাল – ২ মুঠো
আলু – ১টি , ছোট ডুমো করে কাটা
তেজপাতা – ২ টি
শুকনো লঙ্কা – ২ টি
পেয়াঁজ কুচি – ছোট পেয়াঁজ এর অর্ধেক
জিরে বাটা – ২ -৩ টেবল চামচ
আদা বাটা – দেড় টেবল চামচ
কিসমিস – সামান্য
কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো ২ চাচামচ
চিনি , নুন – স্বাদ মতো
ঘি গরম মশলা গুঁড়ো – সামান্য
সর্ষের তেল
প্রণালী –
〰〰〰
মাছের মাথা প্রথমে ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে নিতে হবে। প্যানে সর্ষের তেল গরম করে মাথার টুকরোগুলোকে ভেজে আলাদা করে তুলে রাখতে হবে।
এভাবেই আগে থেকে টুকরো করে রাখা আলু হালকা ভেজে তুলে রাখতে হবে ।
এরপর সেই তেলেই তেজপাতা ও শুকনো লঙ্কাফোড়ন দিতে হবে ।
ফোড়ন হয়ে গেলে ওতে পেয়াঁজকুচি যোগ করতে হবে।
পেঁয়াজ হালকা করে ভাজা হলে তাতে একে একে জিরে বাটা, আদা বাটা, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, সামান্য চিনি ও নুন দিয়ে মশলা ভালো করে কষাতে হবে। দরকার হলে সামান্য জল দেওয়া যেতে পারে।
মশলা থেকে তেল ছাড়লে তার মধ্যে পরিষ্কার করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা গোবিন্দভোগ চাল ৩ -৪ মিনিট ভেজে নিয়ে, আগে থেকে ভেজে রাখা মাছের মাথা,আলু আর কিসমিস যোগ করতে হবে।
সব একসাথে খুব ভালো করে মিশিয়ে সামান্য জল দিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।
জলের পরিমাণ এমন দিতে হবে যাতে ভাত ঝরঝরে অথচ সুসিদ্ধ হয়।
জল শুকিয়ে গেলে, ঢাকা সরিয়ে তাতে ঘি আর গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিয়ে কিছুক্ষন ঢাকা দিয়েরেখে গরম গরম পরিবেশন করুন গোবিন্দভোগ চালের মুড়ির ঘন্ট।
besh valo laglo…. mone hoche akhan e khai…..
Besh laaglo .Tobe amra kintu peyaaj chhara banai.Machhe kokhono peyaj dewa hoina .Ami Canada teh thaki.Amar meyeo je amar sathei o je machh radhhe tateo peyaj deina .